ছোটগল্পের সংজ্ঞা
গল্প আর ছোটগল্প এক নয়। গল্প হল বর্ণিত আখ্যান। কিন্তু ছোটগল্পে আখ্যানকে বিশেষ রীতি, শৈলী ও রূপে প্রকাশ করা হয়। সাহিত্য-শিল্পের মধ্যে ছোটগল্প হল সর্বাধুনিক। ছোটগল্পের জন্ম হয়েছে উনিশ শতকে। শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারে এবং প্রযুক্তি ও যন্ত্রের প্রভাবে মানুষের জীবনে এসেছে ব্যস্ততা। আগের মতো বড় বড় সাহিত্য পড়ার সময়ও সংকুচিত হয়েছে। অথচ মানুষ জীবনের কথা জানতে চায়, সাহিত্য পড়তে চায়। আধুনিক মানুষের উপযোগী করে ছোটগল্প-শিল্পের আবির্ভাব হয়েছে। একালের পড়ুয়া মানুষ আবার সংবাদপত্র ও সাময়িকী নির্ভর। তারা ঝটপট খবর জানতে চায়, ঘটনায় মেতে উঠতে চায়। এদিকে তাদের সময়ও কম। তাদের মনমানসিকতার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে পত্রিকা বা সাময়িকীর পৃষ্ঠা ভরাবার জন্য ছোটগল্পের মতো সংক্ষিপ্ত ও দæ্রত সাহিত্য-আঙ্গিকের জন্ম হয়েছে। আমরা এই পাঠে ছোটগল্পের সংজ্ঞা, জন্মবৃত্তান্ত, ক্রমবিকাশ ও বাংলা ছোটগল্পের ইতিহাস প্রসঙ্গে একটি ধারণা নেয়ার চেষ্টা করবো।
ছোটগল্প
ছোটগল্পের সংজ্ঞা নানাভাবে বোঝানো হয়েছে। ছোটগল্প যে ছোট আকৃতির সাহিত্য রচনা তা নামেই বোঝা যায়। প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, ছোটগল্প প্রথমে গল্প তারপর ছোট। এর আকৃতি কত বড় হতে পারে? এ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, পাঁচশ থেকে দুই হাজার শব্দের মধ্যে ছোটগল্প রচিত হওয়া উত্তম। তবে এ নিয়ে একেবারে ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। এক দুই পৃষ্ঠার ছোটগল্পও আছে, আবার ত্রিশ-চল্লিশ পৃষ্ঠার ছোটগল্পও আছে। যেমন, বাংলাসাহিত্যে বনফুলের ছোটগল্পগুলো ছোট-ছোট, ওদিকে
রবীন্দন্রাথের ‘নষ্টনীড়’, ‘অতিথি’ ইত্যাদি হল বড় আকৃতির ছোটগল্প। উপন্যাসের সঙ্গে ছোটগল্পের পার্থক্য আছে।
উপন্যাসে থাকে জীবনের বিস্তৃত উপাখ্যান। আর জীবনের দু’একটি তাৎপর্যপূর্ণ অংশকে করে ছোটগল্প রচিত হয়। উপন্যাস সবকিছু গ্রহণ করে, কিন্তু ছোটগল্প সব বাহুল্য বর্জন করে।
ছোট গল্পকে সে-জন্য জীবনের খণ্ডাংশ বা সারমর্ম বলা হয়। ছোটগল্প জীবনের একটা সমস্যার সংকটকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সেজন্য ছোটগল্প লেখকের অন্য দিকে দৃষ্টি দেবার অবকাশ নেই। জীবনকে নিয়ে প্রতীতিজাত অনুভ‚তিই ছোটগল্প রচনার মূল প্রেরণা। এ কারণে ছোটগল্প সবসময় লেখকের ব্যক্তিত্বমÐিত হয়।