ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধ কি ৩য় বিশ্বযুদ্ধের আলামত ?
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। প্রশ্ন উঠছে—এই সংঘর্ষ কি বিশ্বযুদ্ধের পূর্বাভাস হতে পারে?
মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক অবস্থান, উভয় দেশের শক্তি এবং তাদের মিত্রদের ভূমিকা এই পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে এটি প্রকৃতপক্ষে ৩য় বিশ্বযুদ্ধের আলামত কিনা তা মূল্যায়ন করতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
১. ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধ
ইসরায়েল ও ইরান দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের সাথে বৈরী সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ইরান ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় অবস্থানকে স্বীকৃতি দেয় না এবং ইসরায়েলও ইরানকে একটি হুমকি হিসেবে দেখে। সাম্প্রতিক হামলার পরে ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, এবং ইরানও পাল্টা আক্রমণের হুমকি দিয়েছে। এই সংঘাত শুধু এই দুটি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি তা বৃহত্তর আকার ধারণ করবে, সেটাই মূল প্রশ্ন।
২. মিত্র দেশগুলোর ভূমিকা
ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মিত্র রাশিয়া ও চীন। যদি ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হয়, তবে এসব শক্তিশালী দেশগুলো সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে এতে জড়িত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে, রাশিয়া এবং চীন ইরানকে সমর্থন দিয়ে আসছে, যা এই সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। এই ধরনের মিত্র দেশগুলোর অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
৩. মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও পরাশক্তির প্রতিযোগিতা
মধ্যপ্রাচ্য বরাবরই বিভিন্ন পরাশক্তির রাজনৈতিক এবং সামরিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবাননের মতো দেশগুলোতে ইতোমধ্যেই চলমান যুদ্ধে ইরান ও ইসরায়েল প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিয়ে আসছে। এই আঞ্চলিক সংঘাতগুলো বড় ধরনের যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি করছে। বিশেষ করে ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত আরও বিস্তৃত হতে পারে, যা গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করবে এবং অন্যান্য দেশগুলোকে জড়িয়ে ফেলতে পারে।
৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতিমধ্যে এই সংঘাত নিরসনের জন্য শান্তির আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ বিষয়ে বৈঠকে বসছে এবং কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে চেষ্টা করছে। তবে, ইরান এবং ইসরায়েল উভয়ই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। তাতে সংঘাত আরও বিস্তৃত আকার ধারণ করতে পারে।
৫. ৩য় বিশ্বযুদ্ধের আলামত: বাস্তবতা নাকি আশঙ্কা?
যদিও ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার এই সংঘাত অত্যন্ত গুরুতর, তবে এটি বিশ্বযুদ্ধের আলামত নিশ্চিত আলামত নয়। বিশ্বযুদ্ধ সাধারণত অনেক দেশের সরাসরি সামরিক জড়িত হওয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত মূলত আঞ্চলিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে যদি এ সংঘাত আরও বিস্তৃত হয় এবং পরাশক্তিগুলোর সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ দেখা যায়, তখন এটি বিশ্বব্যাপী সংঘাতে রূপ নিতে পারে। তবে বর্তমানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের কারণে এমন একটি পরিস্থিতি এড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।
ইসরায়েল ও ইরানের সাম্প্রতিক সংঘাত একটি গুরুতর ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি স্বরূপ। তবে এটি সরাসরি বিশ্বযুদ্ধের আলামত আলামত কিনা, তা এখনই বলা কঠিন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং সংঘাত নিরসনের প্রচেষ্টাই এই সংকটকে বিশ্বব্যাপী সংঘাতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে বিরত রাখতে পারে।