গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায়: সুস্থ মা ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস একটি সাধারণ সমস্যা, যা মা ও অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, যাকে গেস্টেশনাল ডায়াবেটিসও বলা হয়, মূলত গর্ভাবস্থার সময়ে হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে ঘটে। এই অবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা এড়ানো যায়। আসুন, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
১. নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করুন
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের প্রথম এবং প্রধান উপায় হলো রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা। গ্লুকোমিটার ব্যবহার করে ঘরেই সহজে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সকালে খালি পেটে এবং খাবার পরের রক্তের শর্করা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। এভাবে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে বড় ধরনের জটিলতা এড়ানো যায়।
২. সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। গর্ভকালীন সময়ে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা উচিত—
- সুষম খাবার খান: শাক-সবজি, ফলমূল, বাদাম, পূর্ণ শস্য এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।
- তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার কমান: অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, তাই এ ধরনের খাবার পরিহার করুন।
- মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন: মিষ্টি ও চিনি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরিবর্তে প্রাকৃতিক সুগারযুক্ত ফলমূলে মনোনিবেশ করুন।
- নিয়মিত ছোট ছোট খাবার খান: বড় পরিমাণে খাবার না খেয়ে দিনে ৫-৬ বার ছোট ছোট ভাগে খাবার খাওয়া ভালো।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
গর্ভাবস্থায় হালকা ব্যায়াম বা ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, হালকা যোগব্যায়াম, বা অন্যান্য হালকা শারীরিক কার্যক্রম করুন। তবে, ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কারণ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিশ্রম ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৪. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত শর্করা বের হয়ে যায় এবং শরীরের সঠিক কার্যক্ষমতা বজায় থাকে। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।
৫. ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ
কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না। এ সময় চিকিৎসক ইনসুলিন বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ওষুধ গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারেন। ইনসুলিন ব্যবহারের আগে তা সঠিক নিয়মে এবং নির্দিষ্ট ডোজ অনুযায়ী নিতে হবে।
৬. নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতি মাসে বা চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। এ ছাড়া অন্যান্য যেকোনো অসুবিধা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
৭. ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত, যা শরীরের মেটাবলিজমকে সঠিক রাখে এবং শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
৮. মানসিক চাপ কমিয়ে রাখুন
গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ ডায়াবেটিসের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা অন্যান্য শিথিলকরণ কার্যক্রম অনুসরণ করতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এসব উপায় অনুসরণ করলে কী লাভ?
এই পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে এবং মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যাবে। গর্ভাবস্থার সময়ে নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং অনাগত শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়ক হয়।