শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞান

0

 শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞান: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

প্রথমে যদি প্রশ্ন করা হয়, "শিক্ষা কী?" তাহলে আমরা সাধারণত বলি, শিক্ষা হলো নতুন জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জন করে নিজেদের মধ্যে মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন আনা। কিন্তু শিক্ষা এই সাধারণ সংজ্ঞার চেয়ে অনেক গভীর। আসুন, এর অর্থ, প্রভাব, এবং মনোবিজ্ঞানের সঙ্গে শিক্ষার সংযোগ সম্পর্কে জেনে নিই।

শিক্ষার সংজ্ঞা 

শিক্ষা মানুষের মধ্যে তিনটি প্রধান দিক থেকে পরিবর্তন আনে:

  1. জ্ঞানগত পরিবর্তন - যা আমাদের নতুন ধারণা ও তথ্য গ্রহণে সাহায্য করে।
  2. আচরণগত পরিবর্তন - যা আমাদের অভ্যাস এবং মূল্যবোধে পরিবর্তন আনে।
  3. অনুভূতিগত পরিবর্তন - যা আমাদের অনুভূতি এবং আবেগের উপর প্রভাব ফেলে।

শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটানো, অর্থাৎ তার শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও নৈতিক জীবনের সুষম বিকাশ সাধন করা। তাই শিক্ষার ক্ষেত্র শুধু বিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আমাদের ঘর, সমাজ এবং প্রতিষ্ঠানেও বিস্তৃত।

শিক্ষা হলো সেই গুণগত পরিবর্তন যা নতুন জ্ঞান বা দক্ষতার মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে আসে। এই শব্দটি সংস্কৃত ‘শাস’ ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ নির্দেশনা বা উপদেশ প্রদান। শিক্ষা আজীবন চলমান এবং এর ব্যাপ্তি বিশাল। শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর; যদিও প্রাচীনকালে মনোবিজ্ঞান দর্শনের একটি শাখা ছিল, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে এটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আধুনিক মনোবিজ্ঞানের বিকাশ ও প্রসারে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষা শব্দের উৎস এবং প্রকৃত অর্থ

বাংলা ভাষায় 'শিক্ষা' শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'শাস' থেকে, যার অর্থ নির্দেশ বা উপদেশ দেওয়া। তাই শিক্ষা বলতে বিশেষ জ্ঞান অর্জন বা কৌশল আয়ত্ত করাকে বোঝায়। তবে ব্যাপক অর্থে, শিক্ষা মানে জীবনব্যাপী এমন কিছু শেখা যা আমাদের চিন্তাধারা, মূল্যবোধ, এবং জ্ঞানের বিস্তৃতিতে সহায়তা করে।

মনোবিজ্ঞানের সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্ক

শিক্ষা মূলত আমাদের মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তন ঘটানোর একটি উপায়, যার কারণে এর সঙ্গে মনোবিজ্ঞানের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মনোবিজ্ঞান বলতে সাধারণত প্রাণী বা মানুষের আচরণ ও মানসিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণাকে বোঝায়। প্রথম দিকে গ্রীক ভাষায় "সাইকোলজি" শব্দের অর্থ ছিল "আত্মার বিজ্ঞান," যা পরবর্তী সময়ে মন এবং তারপর পুরোপুরি আচরণবিজ্ঞান হিসেবে বিবেচিত হয়।

আধুনিক মনোবিজ্ঞানে শিক্ষার ভূমিকা

আধুনিক মনোবিজ্ঞান আচরণকেই শিক্ষার প্রাথমিক বিষয়বস্তু হিসেবে গ্রহণ করেছে। জার্মান মনোবিজ্ঞানী উইলহেলম উন্ড ১৮৭৯ সালে মনোবিজ্ঞানের প্রথম গবেষণাগার স্থাপন করেন এবং এর মাধ্যমে মনোবিজ্ঞানকে পরীক্ষণযোগ্য এবং বৈজ্ঞানিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে সহায়তা করেন।

পরবর্তীতে জন ওয়াটসন নামের একজন আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী শিক্ষার মানসিক এবং আচরণগত দিকগুলোর উপর বিশেষভাবে গবেষণা করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন যে, আচরণকেই মনোবিজ্ঞানের মূল বিষয় হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। তাই আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা মানুষের আচরণ ও মানসিক প্রতিক্রিয়া উভয়কেই শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করেন।

মনোবিজ্ঞানের শাখা এবং শিক্ষামূলক প্রভাব

মনোবিজ্ঞান বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে গেছে যার মধ্যে শিক্ষা মনোবিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি বিশেষ করে শিক্ষার্থীর জ্ঞানীয় এবং মানসিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী শুধু নতুন তথ্যই শেখে না, বরং সামাজিক দক্ষতা, নৈতিক মূল্যবোধ এবং আবেগীয় স্থিতিশীলতাও অর্জন করে।

শিক্ষা আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে এবং এই পরিবর্তনকে বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করতে হলে মনোবিজ্ঞানকে ব্যবহার করতে হবে। তাই শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক গভীর এবং পরস্পর নির্ভরশীল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !
To Top