গাঁজা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
গাঁজা খাওয়ার উপকারিতা
মারিজুয়ানা (Marijuana) বা গাঁজা হলো
একটি উদ্ভিজ্জ পদার্থ যা কানাবিস (Cannabis) গাছ থেকে
প্রাপ্ত। এটি সাধারণত বিনোদনমূলক,
চিকিৎসা, বা আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্যে
ব্যবহৃত হয়। কিছু গবেষণায়
দেখা গেছে, মারিজুয়ানা ব্যবহারে কয়েকটি সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকতে পারে, তবে এর সাথে
কিছু নেতিবাচক প্রভাবও জড়িত। নিচে মারিজুয়ানা ব্যবহারের
কিছু সম্ভাব্য উপকারিতা উল্লেখ করা হলো, যা
সাধারণত চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়:
১. ব্যথা উপশম
মারিজুয়ানা প্রায়শই দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে
ক্যান্সার বা আর্থ্রাইটিসের কারণে
সৃষ্ট ব্যথা কমাতে এটি সহায়ক হতে
পারে। এর সক্রিয় উপাদান
টিএইচসি (THC) এবং সিবিডি (CBD) স্নায়ুতন্ত্রের
উপর প্রভাব ফেলে ব্যথা উপশম
করে।
২. মানসিক চাপ
এবং উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ
কিছু গবেষণায় দেখা
গেছে, সঠিক পরিমাণে মারিজুয়ানা
ব্যবহার মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ
কমাতে সহায়ক হতে পারে। এটি
শরীরকে শিথিল করে এবং মানসিক
প্রশান্তি দেয়, যা স্ট্রেস কমাতে
সাহায্য করে। তবে উচ্চ
মাত্রায় ব্যবহার করলে উল্টো উদ্বেগ
বেড়ে যেতে পারে।
৩. ঘুমের উন্নতি
নিদ্রাহীনতা বা ঘুমের সমস্যা
(insomnia) মোকাবিলায় মারিজুয়ানার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। এটি
শরীরকে শিথিল করে এবং ঘুমের
চক্র উন্নত করতে সহায়তা করে।
বিশেষত, যারা দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের
সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি কার্যকর
হতে পারে।
৪. বমি বমি
ভাব কমানো
ক্যান্সারের কেমোথেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসা
পদ্ধতির কারণে সৃষ্ট বমি বমি ভাব
কমাতে মারিজুয়ানা সাহায্য করতে পারে। এটি
বমি এবং খারাপ লাগা
কমিয়ে রাখে এবং খাবার
গ্রহণে সাহায্য করে।
৫. খিদে বাড়ানো
কিছু রোগ যেমন
এইচআইভি/এইডস, ক্যান্সার বা অন্যান্য ক্রনিক
রোগের কারণে রোগীদের খিদে কমে যায়।
মারিজুয়ানা ব্যবহারের ফলে খিদে বাড়ে,
যা রোগীদের পর্যাপ্ত খাবার খেতে উৎসাহিত করতে
পারে এবং শারীরিক পুনরুদ্ধার
প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে পারে।
৬. এপিলেপ্সি বা
মৃগীরোগের চিকিৎসা
মারিজুয়ানার একটি বিশেষ উপাদান
সিবিডি (CBD) এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগের চিকিৎসায়
কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
বিশেষ করে ড্রাভেট সিন্ড্রোম
এবং লেনক্স-গাস্টাট সিন্ড্রোম নামক জটিল এপিলেপ্সির
ক্ষেত্রে সিবিডি তেলের ব্যবহার অনেক সময় উপকারী
হয়।
৭. স্নায়বিক সমস্যা
ও রোগের চিকিৎসা
মারিজুয়ানার কিছু উপাদান স্নায়বিক
রোগের চিকিৎসায়ও সহায়ক হতে পারে। বিশেষত,
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple
Sclerosis) এবং পারকিনসনস ডিজিজের মতো রোগে এটি
ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি
স্নায়ু ব্যথা এবং পেশির খিঁচুনি
কমাতে সাহায্য করে।
৮. গ্লুকোমা চিকিৎসায়
সহায়ক
গ্লুকোমা হলো চোখের একটি রোগ, যেখানে চোখের ভেতরে চাপ বেড়ে যায় এবং তা অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে। মারিজুয়ানা ব্যবহার চোখের এই চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে, যদিও এটি স্থায়ী সমাধান নয়।
গাঁজা খাওয়ার অপকারিতা
মারিজুয়ানার (Marijuana) ব্যবহার কিছু ক্ষেত্রে উপকারিতা
নিয়ে আসলেও এর অনেক ক্ষতিকর
প্রভাবও রয়েছে। বিশেষ করে, দীর্ঘমেয়াদী এবং
অতিরিক্ত ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের
উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। নিচে মারিজুয়ানার প্রধান
ক্ষতিকর প্রভাবগুলো তুলে ধরা হলো:
১. মানসিক স্বাস্থ্যের
উপর প্রভাব
মারিজুয়ানা ব্যবহারের ফলে মানসিক স্বাস্থ্য
সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এতে উদ্বেগ (anxiety), বিষণ্ণতা (depression), এবং পারানয়া (paranoia) বেড়ে যেতে
পারে। বিশেষ করে যারা মানসিক
স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে মারিজুয়ানা ব্যবহার সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করে
তুলতে পারে।
২. স্মৃতিশক্তি এবং
জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাস
মারিজুয়ানা ব্যবহারের একটি প্রধান ক্ষতিকর
প্রভাব হলো স্মৃতিশক্তি দুর্বল
হয়ে পড়া। দীর্ঘ সময় ধরে এর
ব্যবহার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং জ্ঞানীয়
ক্ষমতা যেমন মনোযোগের ঘাটতি
ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। এটি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়
বা কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. ফুসফুসের সমস্যা
যদিও মারিজুয়ানার ধূমপান
সরাসরি তামাকের মতো ক্ষতিকর নয়,
তবুও ফুসফুসের উপর নেতিবাচক প্রভাব
ফেলে। ধূমপানের মাধ্যমে মারিজুয়ানা গ্রহণ ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ যেমন ব্রংকাইটিস,
ক্রনিক কফ এবং শ্বাসকষ্টের
ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘমেয়াদী ধূমপানকারীরা ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকিতেও পড়তে পারে।
৪. শারীরিক নির্ভরতা
এবং আসক্তি
মারিজুয়ানার দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার শারীরিক এবং মানসিক নির্ভরতায়
(dependence) পরিণত হতে পারে। নিয়মিত
ব্যবহারের ফলে ব্যবহারকারী আসক্ত
হয়ে পড়তে পারে এবং মারিজুয়ানা
না পেলে তারা উত্তেজনা,
বিষণ্ণতা, এবং ঘুমের সমস্যা
অনুভব করতে পারে। আসক্তি
থেকে বের হতে না
পারলে ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।
৫. প্রজনন ক্ষমতার
উপর প্রভাব
মারিজুয়ানা ব্যবহারের ফলে পুরুষ ও
মহিলাদের উভয়ের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। পুরুষদের
ক্ষেত্রে স্পার্মের গুণমান এবং গতিশীলতা কমে
যেতে পারে, যা সন্তান ধারণে
সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মহিলাদের
ক্ষেত্রে মাসিক চক্রের পরিবর্তন এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
দেখা দিতে পারে।
৬. চালনা ও
প্রতিক্রিয়ার সময় হ্রাস
মারিজুয়ানা গ্রহণের ফলে প্রতিক্রিয়ার সময়
(reaction time) হ্রাস পায়, যা গাড়ি চালানোর
সময় বিপজ্জনক হতে পারে। এটি
মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায় এবং গাড়ি চালানোর
সময় সঠিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে
পড়ে। এর ফলে সড়ক
দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৭. মানসিক রোগের
ঝুঁকি
দীর্ঘমেয়াদী মারিজুয়ানা ব্যবহারের সাথে সিজোফ্রেনিয়া (schizophrenia) এবং অন্যান্য মনস্তাত্ত্বিক
রোগের ঝুঁকি সম্পর্কিত একটি সম্পর্ক রয়েছে।
বিশেষ করে, যারা বয়ঃসন্ধিকালে
বেশি মাত্রায় মারিজুয়ানা ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে
মানসিক রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
৮. সামাজিক ও
ব্যক্তিগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব
মারিজুয়ানা ব্যবহারকারী ব্যক্তিরা অনেক সময় সামাজিক
ও ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা অনুভব করেন। এটি সম্পর্কের উপর
নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন পরিবার বা
বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ কমে
যাওয়া এবং কর্মক্ষেত্রে কর্মক্ষমতা
হ্রাস পাওয়া।
৯. আয়ুর উপর
প্রভাব
মারিজুয়ানার দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের আয়ু কমে যেতে
পারে। ধূমপানের মাধ্যমে নিয়মিত মারিজুয়ানা গ্রহণের ফলে শারীরিক এবং
মানসিক সমস্যাগুলো বেড়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে আয়ু
হ্রাস করতে পারে।
উপসংহার
মারিজুয়ানার কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার
উদ্দেশ্যে ব্যবহার উপকারী হতে পারে, তবে
এর দীর্ঘমেয়াদী এবং অতিরিক্ত ব্যবহারে
শরীর ও মনের উপর
মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। এজন্য, মারিজুয়ানার ব্যবহার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এর সম্ভাব্য
ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সম্পর্কে জানা এবং প্রয়োজনে
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।