বিদেশে উচ্চশিক্ষাঃ কীভাবে শুরু করবেন প্রস্তুতি?
বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা অনেকের মধ্যেই রয়েছে, কিন্তু সফলভাবে এই স্বপ্ন পূরণের জন্য দরকার সঠিক গাইডলাইন, পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি। এখানে আমরা আপনাকে একটি পরিপূর্ণ নির্দেশিকা দেব, যা আপনাকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনে সহায়তা করবে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি কিভাবে শুরু করবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিতভাবে নিচে ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলো:
ধাপ ১: কোন বিষয়ে পড়বেন তা ঠিক করা
স্নাতক পর্যায়ে (Bachelor’s): যদি উচ্চ মাধ্যমিকের পর স্নাতক পর্যায়ে বিদেশে পড়তে যেতে চান, প্রথমেই ঠিক করুন কোন বিষয়ে পড়তে চান। ধরুন, যদি আপনার কোডিং ভালো লাগে, তবে প্রোগ্রামিং বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বেছে নিতে পারেন। যদি রোবটিক্সে আগ্রহ থাকে, তবে মেকানিক্যাল বা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ভালো বিকল্প হতে পারে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার আগ্রহ এবং চাকরির বাজারের চাহিদার মধ্যে সমন্বয় করা। বিষয় বেছে নেওয়ার পর, যে দেশগুলোতে সেই বিষয় ভালো পড়ানো হয় এবং কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই বিষয়ে খ্যাতিমান, তা নিয়ে গবেষণা করুন।
মাস্টার্স বা পোস্টগ্রাজুয়েশন: যারা ইতোমধ্যেই স্নাতক শেষ করেছেন, তাদের বিষয় মোটামুটি নির্ধারিত থাকে। অনেকে নিজের বিষয় থেকে একটু ভিন্ন কিছু নিয়ে যেমন- অর্থনীতি, এমবিএ বা ফাইন্যান্স নিয়ে পড়তে আগ্রহী হন। ক্যারিয়ার কোন দিকে নিয়ে যেতে চান, তা নির্ভর করে বিষয় নির্বাচন করুন। স্নাতকের শেষ বছরের দিক থেকেই বিদেশে পড়াশোনার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করতে হবে। যেমন, কোন দেশে যেতে চাইছেন, কি কি কাগজপত্র লাগবে, কি ধরনের পরীক্ষা দিতে হবে – এ সবকিছু আগে থেকেই জেনে রাখুন।
ধাপ ২: কোন পরীক্ষায় বসবেন তা নির্ধারণ করা (GRE, GMAT, IELTS, TOEFL)
GRE বা GMAT: আমেরিকায় যারা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যেতে চান তাদের জন্য GRE (Graduate Record Examination) প্রয়োজন হয়। ব্যবসা বা মানবিক শাখার জন্য GMAT (Graduate Management Admission Test) প্রয়োজন। যাদের লক্ষ্য আমেরিকা নয়, তাদের GRE/GMAT প্রয়োজন নাও হতে পারে। তাই, গন্তব্য দেশ অনুযায়ী পরীক্ষা নির্ধারণ করুন।
IELTS বা TOEFL: ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য IELTS (International English Language Testing System) বা TOEFL (Test of English as Foreign Language) পরীক্ষাগুলো অন্যতম। IELTS সাধারণত UK ও অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক এবং TOEFL মূলত আমেরিকা ভিত্তিক। গন্তব্য দেশের উপর নির্ভর করে কোন পরীক্ষায় বসবেন তা ঠিক করুন। বেশিরভাগ দেশে এই দুই পরীক্ষারই মেয়াদ ২ বছর।
ধাপ ৩: কাগজপত্র প্রস্তুত করা
- আবেদন করার জন্য প্রথমেই যেসব কাগজপত্র দরকার তা হলো: CV, SOP (Statement of Purpose), একাডেমিক মার্কশীট, IELTS/TOEFL ফলাফল এবং ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট। এই কাগজগুলো দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “Confirmation of Enrollment” পেলে ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। ভিসা আবেদন করতে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম সনদ, ট্যাক্স সনদসহ আরও কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
ধাপ ৪: দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন
দেশ নির্বাচন: কোন দেশে পড়তে যেতে চান তা নির্ধারণ করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া, জীবনযাত্রার মান, চাকরির সুযোগ, স্কলারশিপ প্রাপ্তির সম্ভাবনা সবকিছু খতিয়ে দেখতে হবে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সাধারণত আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে পড়তে যান।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন: বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হলে সেই দেশের ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং দেখুন। যে বিষয়ে পড়তে চান, সেটি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো পড়ানো হয় এবং স্কলারশিপের সুযোগ কেমন, সেসব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
ধাপ ৫: স্কলারশিপের জন্য আবেদন বা সেলফ ফান্ডিং
- বিদেশে উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল। তাই অনেক শিক্ষার্থী স্কলারশিপের জন্য আবেদন করে থাকেন। যেমন- যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট, অস্ট্রেলিয়ার ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ ইত্যাদি। তবে যারা নিজস্ব অর্থায়নে (Self Funding) পড়াশোনা করতে পারেন, তাদের স্কলারশিপের চিন্তা করতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ডিংও অনেক সময় পাওয়া যায়।
ধাপ ৬: আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ (Solvency Certificate)
- ভিসার জন্য আবেদন করতে গেলে আপনাকে আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে হবে। যদি স্কলারশিপ পান তবে বৃত্তির কাগজপত্র দেখাতে হবে। আর যদি সেলফ ফান্ডিং করেন তবে ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
ধাপ ৭: ডকুমেন্ট পাঠানো ও অন্যান্য কার্যক্রম
- অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখন শুধুমাত্র অনলাইন আবেদন গ্রহণ করে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় হার্ড কপি চায়, তাদের জন্য FedEx বা DHL ব্যবহার করে ডকুমেন্ট পাঠানো যেতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের EMS সেবা ব্যবহার করেও ডকুমেন্ট পাঠানো সম্ভব।
প্রতিটি ধাপেই যত্ন সহকারে এগোতে হবে। মনে রাখবেন, বিদেশে উচ্চশিক্ষা কেবল জ্ঞানার্জনের জন্য নয়, এটি আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। সুতরাং পরিকল্পনামাফিক কাজ করুন এবং সফলতার পথে এগিয়ে যান!